বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অরুণ জয় ধরের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়া, সরকারি অফিস টাইমে উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ পেয়ে বুধবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান এ প্রতিবেদক। গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নারী-পুরুষের জটলা। সচিব অরুণ জয় ধরের অপেক্ষায় বসে আছেন এসব সেবাগ্রহীতারা। প্রতিদিন নিজের ইচ্ছামত অফিসে উপস্থিত হন অরুণ জয় ধর; এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সরেজমিনে গেলে অভিযোগের সত্যতা মেলে। সেদিন বেলা ১২টায় অফিসে আসেন সচিব অরুণ জয় ধর। শুধু তাই নয়, অরুণ জয় ধরের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন করতে অতিরিক্ত ‘ফি’ আদায়, গ্রাহকদের সাথে দূর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। টাকা আদায়ের পর রশীদও দেন না তিনি। এমতাবস্থায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অরুণ জয় ধর-ই যথেষ্ট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেবা নিতে আসা এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আপনি আমার নাম লিখবেন না। নাম লিখলে সেক্রেটারি জন্মনিবন্ধন দিবে না। আগে জন্মনিবন্ধন নিয়ে ফেলি, এরপর লিখবেন। সকাল থেকে এখানে এসে বসে আছি। কিন্তু সেক্রেটারি এখনো আসেননি।’
জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেশে শিশু জন্মের ৪৫ দিন পর্যন্ত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে কোনো ‘ফি’ নেয়া হয় না। ৪৫ দিন বয়সের পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা এবং ৫ বছরের উপরে সব বয়সীদের ৫০ টাকার বেশি ফি গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে উল্টো নিয়মে চলছে অরুণ জয় ধরের আইন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সর্বশেষ সরকারি বিধি মোতাবেক নতুন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সর্বোচ্চ ফি ৫০ টাকা। কিন্তু তিনি এর স্থলে প্রতিটি জন্মনিবন্ধনে ১০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। এর বিপরীতে গ্রাহকরা রশিদ চাইলে রশিদ লাগবে না বলে তাল বাহানা করছেন। তিনি সেবাগ্রহীতাদের সাথে খারাপ আচরণও করেন বলে অভিযোগ। কেউ জন্মনিবন্ধনের জন্য আসলে প্রথমে তাকে সার্ভারের সমস্যা,আপনার নাম অনলাইনে নেই, কাগজপত্রে ঝামেলা আছে বলে বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দেন। পরে ৫০০-৫০০০ টাকায় চুক্তি করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিবন্ধন দেন বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। তিনি টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না। তার আচার-আচরণ ও ব্যবহার অত্যন্ত আপত্তিজনক বলে জানান সেবাগ্রহীতারা।
ছনুয়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘বোনের জন্মনিবন্ধন করতে টানা ৫দিন ইউনিয়ন পরিষদে এসেও কাজ হলো না। সচিব বিভিন্ন অজুহাতে কাজ করে দিচ্ছেন না। সব কাগজপত্র দিলেও তিনি জন্মনিবন্ধন করে দেননি।’
ছনুয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শওকত আরা বেগম বলেন, ‘ছেলের জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে অসুস্থ শরীরে ৫বার গিয়েছি। সেক্রেটারি বলেছেন সংশোধন করতে গেলে এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট লাগবে। সেটাও দিলাম। কিন্তু তিনি সংশোধন করে দেননি। আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখে দূর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অরুণ জয় ধর বলেন, ‘এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিন হাজার পাঁচ হাজারের বিষয়টা তো বুঝলাম না। এই বিষয়টা আসলে তো আমারও লজ্জা লাগতেছে। এই বিষয়টা কোত্থেকে আসলো। এমনও হইছে যে, কেউ যদি চা খাওয়ার কথা বলে ১০০ টাকা দেয়, সেটা আমি ওদেরকে ফেরত দিয়েছি। এরকম একটা মনগড়া তথ্য আপনাদেরকে দিলো, প্রমাণ করতে পারলে এটার দায়ভার আমি নেব।’
নিয়মিত অফিসে উপস্থিত না হওয়া ও দেরিতে অফিসে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে সচিব মানেই হচ্ছে ব্যস্ততা। আমাকে ৩৮টা দফতরের কাজ করতে হয়। এই দফতরগুলোর এক-এক সময় এক এক রকম কাজ থাকে। যেমন আজকে মাতৃকালীন ভাতার ট্রেনিং ছিল। ট্রেনিংয়ে গেলাম। আবার নাগরিক সেবাও দিলাম। সবকিছু একজনকে ম্যান্টেইন করতে হয়। ওদিক দিয়ে অফিসে যেতে একটু দেরি হয়।’
এ বিষয়ে জানার জন্য ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদকে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারস্যাপারগুলো ইইএনও স্যার দেখবেন। আপনি প্রমাণ সহকারে ইউএনও স্যারকে জানান।’
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য বাঁশখালী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।